কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান নাথান বম এখন কোথায় আছেন? এর উত্তরই মিলছে না। দলের পক্ষ থেকে দাবি, নাথান বম সুইজারল্যান্ডে আছেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারণা, তিনি নেদারল্যান্ডসে আছেন। আবার সীমান্ত পেরিয়ে নাথান বম ভারতের মিজোরামে আছেন বলেও কেউ কেউ মনে করেন। সব মিলিয়ে তাঁর অবস্থান নিয়ে একধরনের ধোঁয়াশা এখনো রয়ে গেছে।
আরেকটা বড় প্রশ্ন হচ্ছে, দলের সদস্যরা কোথায় লুকিয়ে আছেন? কেএনএফ সূত্র অবশ্য বলছে যে দলটির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সদস্য এখন বাংলাদেশের ভেতরই আছে। তবে এর চেয়ে বেশিসংখ্যক সদস্য ছড়িয়ে আছে মিয়ানমার ও মিজোরামের বিভিন্ন এলাকায়। মিজোরামের একাধিক সূত্র বলছে, ওই রাজ্যসংলগ্ন মিয়ানমার সীমান্তের একটি জায়গায় নাথান বম আছেন সন্দেহ করে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে যে ব্যাংকে দুই দফা হামলার পর কেএনএফের বেশির ভাগ সদস্যই আসলে পালিয়ে গেছে। আর নাথানের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে স্পষ্ট করে তারা কেউ কিছু বলছে না।
কারা এই কেএনএফ, তাদের নতুন হামলার নেপথ্যে কী
কুকিচিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) ইনফরমেশন অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের (আইআইবি) ক্যাপ্টেন ফ্লেমিং প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, কেএনএফের প্রেসিডেন্ট নাথান বম স্যার আসলে এখন সুইজারল্যান্ডে আছেন। সেখানে বাদ দিয়ে যেখানেই খোঁজা হোক না কেন, কেউ তাঁকে পাবে না।
কেএনএফ ২০২২ সালের গোড়ার দিকে পাহাড়ে তৎপরতা শুরু করে। পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। সেই আস্তানায় ওই বছরের অক্টোবর মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া ও কেএনএফের বেশ কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
কেএনএফের বিরুদ্ধে এই অভিযান চলার সময়ই ওই সশস্ত্র দলের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের মে মাসে। ওই কমিটির সঙ্গে চলতি বছরের ৫ মার্চ দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয় বেথেল পাড়ায়। শান্তি আলোচনার মধ্যেই ২ এপ্রিল বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে ও পরদিন ৩ এপ্রিল থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে ১৭ লাখ টাকা, ২টি লাইট মেশিনগানসহ (এলএমজি) ১৪টি অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায় কেএনএফ সদস্যরা। সোনালী ব্যাংক রুমা শাখার ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিনকেও অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা। পরে অবশ্য তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয়। পরপর দুই উপজেলায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পর এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের হামলার চিত্র
বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের হামলার চিত্রছবি: সিসি ক্যামেরার ভিডিও থেকে নেওয়া
কেএনএর ক্যাপ্টেন ফ্লেমিং প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মোট সদস্যসংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। তাদের মধ্যে শুধু বম নয়, ম্রো, খিয়াং পাংকুয়া, লুসাইসহ সব জাতিসত্তার সদস্যই আছেন। লুসাইদের সংখ্যা কম। এর একটি অংশ এখনো বাংলাদেশে আছে। তবে বেশির ভাগ সদস্য দেশের বাইরে বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।’