প্রদীপ কুমার রায় : অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহরের আলিয়া কামিল মাদ্রাসার মাঠে মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প। প্রায় ৫ বছর আগে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে জাদুঘরটি করা হয়েছিল। এটি এখন মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দরজা-জানালা খুলে নিয়ে গেছে মাদকসেবীরা। স্থানীয়রা জানান, আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ১৯৭১ সালে রায়পুরের মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি ছিল। স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধারা এ স্থানটিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণা করেন। ২০২০ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই জাদুঘর স্তম্ভটি নির্মাণ করেছিলেন। সেটি এখন পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত। গত ২৭ জুলাই রায়পুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে স্থানীয় এমপি নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের উপস্থিতিতে মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় কমিটির সদস্য পৌর মেয়র এবং পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন ও স্মৃতি জাদুঘরটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতা বাকীবিল্লাহ জানান, দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমরা যাদের কারণে এই মহান বিজয় পেলাম, তাদের স্মৃতি নিয়ে অবহেলা করছেন। বর্তমানে আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি যাদুঘরটি ২৪ঘণ্টা মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানা হয়ে উঠেছে। দুপুরের পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত জাদুঘরসহ তার পাশে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে, ভবনের নিচতলার বারান্দায় এবং মসজিদের পুকুরঘাটেও চলছে মাদকের আড্ডা। জাদুঘরের দরজা-জানালা খুলে নিয়ে গেছে মাদকসেবীরা। দুটি টয়লেট ভেঙে দিয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, জাদুঘরের স্তম্ভটিতে পড়ে আছে ইয়াবা সেবনে ব্যবহৃত পোড়া ফয়েল পেপার, বিয়ারের ক্যান, সিগারেটের খোসা। এদিকে শিশুরা খেলছে স্তম্ভের ভেতরে এবং মাঠে খেলছে কিশোররা। অন্যদিকে মাদ্রাসার শিক্ষকদের সভা হলেও তারা কিছুই বলার সাহস পাচ্ছেন না; যা দেখে সহজেই অনুমান করা যায় জাদুঘর স্তম্ভটি এখন মাদকসেবীদের নিরাপদ আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
চরবংশী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মহসীন রেজা বলেন, গত তিন বছর মুক্তিযুদ্ধ স্তম্ভটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। দরজা-জানালা-টয়লেট কিছুই নেই। মানুষ এটি দেখতে আসবে, এজন্য খেলার সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছিল। তাও গুঁড়িয়ে দিয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানটি সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
পৌর মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট বলেন, যুদ্ধকালীন ক্যাম্পটি এখন মাদকসেবীদের নিরাপদ আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের একটি লালিত স্বপ্ন। সরকারিভাবে এটি দ্রুত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘরটি দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পদ। তাদের স্মৃতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামে স্মৃতিজড়িত ভবনটির উন্নয়নের বিষয়ে আমি কাজ করব।