September 13, 2024, 11:19 am
নোটিশ :
সাংবাদিক নিয়োগ চলছে। যোগাযোগ ০১৭৭৯০৫৫১১১

রায়পুরে গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে উধাও জনতা ব্যাংক র্কমর্কতা ফয়েজ

প্রদীপ কুমার রায়

প্রদীপ কুমার রায় : রায়পুরে জনতা ব্যাংক শাখার ফয়েজ আহাম্মদ (৩৫) নামের সেকেন্ড অফিসার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে কানাডা চলে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে ব্যাংক, শতাধিক গ্রাহক ও আত্নীয়স্বজনের প্রায় সাত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় চলছে।

এঘটনায় মঙ্গলবার বিকালে (৯ জুলাই) জসিম উদ্দিন নামের এক গ্রিল ওয়ার্কসপ ব্যবসায়ী তার এক কোটি ২২ লাখ টাকা উদ্ধার ও প্রতারণার অভিযোগে আদালতে মামলা করেন। এছাড়াও গ্রাহক ও স্বজনরা প্রতিদিনই ব্যাংক ম্যানেজার ও ফয়েজের বাড়িতে নানার কাছে ধর্না দিচ্ছেন। এদিকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ না করে ও ৫ দিনের ছুটি নিয়ে কর্মস্থলে উপস্থিত না হওয়ায় ফয়েজের মালিকানাধীন বাড়ির সামনে মার্কেটে নোটিশ লাগিয়েছে ব্যাংক ম্যানেজার। তবে দুই মাসেও তাকে বরখাস্ত করেননি তারা।

ফয়েজ উপজেলার রায়পুর ইউপির দেবিপুর গ্রামে মৃত জয়নাল জমাদারের একমাত্র ছেলে। সে গত ৮ বছর জনতা ব্যাংক রায়পুর শাখার সেকেন্ড অফিসার (লোন সেকশনের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

রায়পুরের দেবিপুর গ্রামের গ্রীল ওয়ার্কসপ ব্যাবসায়ী জসিম জানান, ফয়েজ আমার গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত ও ভাল মনে করেছিলাম। সে সবসময় নিশ্চুপ ও শান্ত প্রকৃতির ছিল। বিশ্বাস করে শেয়ার ব্যাবসার নামে এক কোটি ২২ লাখ টাকা দিয়েছি। কয়েকমাস লাভ দেয়। হঠাৎ এক বন্ধু এসে বলে ফয়েজ তোমার টাকাসহ অনেকের প্রায় সাত কোটি টাকা ও স্ত্রী- সন্তানকে নিয়ে কেনাডা চলে গেছে। আমার মতই নতুনবাজার এলাকার ছাগল ব্যাবসায়ী জাকির হোসেনের ৭৩ লাখ টাকা নিয়ে যায়। এভাবেই শেয়ার ব্যবসার নাম করে প্রায় ৫০ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এবং প্রায় ২০ জন শিক্ষক ও আত্নীয়স্বজন সহ শতাধিক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ২, ৫- ১০ লাখ টাকা তোলেন।

ভুক্তভোগী রায়পুর ইউপির দেবিপুর গ্রামের সায়েস্তানগর দাখিল মাদরাসা শিক্ষক ও ওষুধ দোকানি রেজোয়ান বলেন, ব্যাংক থেকে একজন অফিসার ফোন দিয়ে বলেন, ১০ লাখ টাকার কিস্তি পরিশোধ করছেন না কেন? এতে আমি হতভাগ হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করি কিসের ১০ লাখ টাকা কিসের কিস্তি? তখন অফিসার ফোন কেটে দেন। তখনি বুঝলাম অ্যাকাউন্ট দিয়ে ওই টাকা উত্তোলন করেছেন ফয়েজ। শুধু ব্যবসায়ী জসিম, জাকির ও শিক্ষক রেজোয়ানই নন শায়েস্তানগর গ্রামের ব্যবসায়ী মো. নাসির, ইব্রাহিম, আলাউদ্দিন সহ শতাধিক গ্রাহকের প্রতারণা করে মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় সাত-আট কোটি টাকা নিয়ে স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে ক্যানাডা চলে গেছেন। অনেকে বলছেন, ব্যাংক কর্মকর্তা ফয়েজ সবসময় অনলাইনে জমজমাট ডলার ব্যবসা (বিট কয়েন) সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

পলাতক ব্যাংক কর্মকর্তা ফয়েজ প্রতারণার কথা স্বীকার সোমবার রাতে (৮ জুলাই) তার ফেইসবুক আইডি থেকে লাইভ দিয়ে বলেন, আমি ব্যাংকে চাকুরীর পাশাপাশি বেশি লাভবান হওয়ার জন্য ব্যাংকসহ বন্ধু-বান্ধব-আত্নীয় স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমার বিশ্বস্ত বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার ব্যবসা করেছি। কিন্তু সে কয়েক মাস ব্যবসায় লাভ দেখিয়ে হঠাৎ জার্মান চলে গেছে। সে যে জার্মান নাগরিক তা আমি জানতাম না। তাই গোপনে এক বন্ধুর মাধ্যমে স্ত্রী অন্তুুর চিকিৎসার নামে তাকে ও শিশু ছেলেকে নিয়ে ভারত হয়ে কানাডা চলে আসি। আমি খুব অন্যায় করেছি। আল্লাহসহ সবার কাছে ক্ষমা চাই। ব্যাংকসহ সবার টাকা আস্তে আস্তে পরিশোধ করব।

ফয়েজের নানা নজরুল জমাদার (৭০) বলেন, গত এক মাস ধরে অনেক মানুষ আমার কাছে এসে অভিযোগ করছেন। তবে ফয়েজ ব্যাংক থেকে ৮০ লাখ টাকা লোন নিয়ে বাড়ীর সামনে মার্কেট করে। সেই টাকা না দেয়ায় মার্কেটের সামনে সাইনবোর্ড লাগিয়েছ ব্যাংক ম্যানেজার।

জনতা ব্যাংক রায়পুর শাখার ব্যবস্থাপক তারেক মোহাম্মদ মুছা জানান, লোন অফিসার ফয়েজ আহাম্মদ তার স্ত্রীকে ভারতে চিকিৎসা করাবেন বলে গত ২৬ মে ৫ দিনের ছুটি নেন। গত এক মাস সে ব্যাংকে আসছেননা। তার কাছে ব্যাক্তিগত ৫ লাখ টাকা লোন পাবেন ব্যাংক। এজন্য তাকে নোটিশ পাঠানো হয় এবং তার বাড়ীর সামনে মালিকানাধীন পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট মার্কেটের সামনে নোটিশবোর্ড ছাটানো হয়েছে। তবে ব্যাংকের গ্রাহকদের কোন টাকা নেননি বলে দাবি করেন তিনি।। ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা শারমিন ভাটের সময়ে একাজ করেন ফয়েজ। আমি দুই মাস হলো যোগদান করি। সাবেক ব্যাংক ম্যানেজার শারমিন ভাট বলেন, ফয়েজ ব্যাংকের কোন গ্রাহকের টাকা নেননি বলে দাবি করেছেন।

রায়পুর থানার ওসি ইয়াসিন ফারুক মজুমদার জানান, জনতা ব্যাংকে লোন অফিসার ফয়েজ আহাম্মদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে আইনত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা