প্রদীপ কুমার রায়:
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই বিবাদমান পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১২টা থেকে আজ শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে এ সংঘর্ষ চলে। রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের খাসেরহাট ও বাবুরহাট এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষ, বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত দুইজন—শফিক রাঢ়ি (৪৮) ও লিন রাঢ়ি (৪৫)—কে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আহত তাহমিনা বেগম, সানু বেগম, গণি রাঢ়ি, মিজান খান, কবির হোসেন, বিল্লাল হোসেন ও জিহাদকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংঘর্ষের পেছনের কারণ
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট মেঘনার চর, মাছঘাট ও বাজার দখল নিয়ে উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির মধ্যে দুটি গ্রুপের বিরোধ শুরু হয়। একপক্ষের নেতৃত্বে আছেন উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব শামিম গাজী, অন্যপক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউনিয়ন বিএনপির নেতা ফারুক কবিরাজ। দলীয় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ বিরোধ চরমে পৌঁছেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে চান্দারখাল এলাকায় শামিম গাজীর গ্রুপের একটি ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন ফারুক গাজীর কর্মীরা। এর জের ধরে শামিম গাজীর নেতৃত্বে ফারুক কবিরাজের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে ফারুক কবিরাজের নির্দেশে শামিম গাজীর অফিসে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।
শুক্রবার সকালে বুল ও কবির হোসেনের নেতৃত্বে শামিম গাজীর শ্বশুর শফিক রাঢ়ির বাড়িতে হামলা চালানো হয়। সেখানে শফিক রাঢ়িকে মারধর, বাড়িঘর ভাঙচুর, মিজানের দোকানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়।
পক্ষগুলোর অভিযোগ ও প্রশাসনের অবস্থান
উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব শামিম গাজী অভিযোগ করেন, ফারুক কবিরাজের নির্দেশে তাঁদের ওপর হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ফারুক কবিরাজ এলাকায় এলে সবসময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ফারুক কবিরাজ বলেন, “ব্যানার নিয়ে সমস্যা হলে মীমাংসার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু শামিম গাজীর লোকজন আমার নামে কটূক্তি করে বাজারে মিছিল করে। এরপর আমাদের অফিস ভাঙচুর করা হলে আমরা পাল্টা আক্রমণ করি।”
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, “পুলিশ ও সেনাবাহিনী পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একজনকে আটক করা হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ মামলা করেনি।”
এ ঘটনার পর এলাকায় এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো মুহূর্তে আবার সংঘর্ষের আশঙ্কায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।