প্রদীপ কুমার রায় : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরশহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য করের বোঝা ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠেছে। চা দোকানী থেকে শুরু করে ছোট ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ন্যূনতম আয়ের জন্য সংগ্রাম করছেন, অথচ তাদের ওপর চাপানো হচ্ছে পৌরসভার “আয়কর” নামের একটি অতিরিক্ত অর্থনৈতিক বোঝা।
পৌর শহরের পোস্ট অফিস সংলগ্ন একটি ছোট চায়ের দোকানের মালিক ইউসুফ জানান, ট্রেড লাইসেন্স ফি বাবদ দিতে হয় ৫০০। এরপর ১৫% ভ্যাট। তার ওপরে ৫০০ টাকা আয় কর। “দিন শেষে ৫০০ টাকা লাভ করাই কঠিন, সেখানে এই কর দেওয়া আমাদের জন্য দুঃস্বপ্ন।” অনেক বড় ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, জেলা আয়কর অফিসের পাশাপাশি পৌরসভাও তাদের কাছ থেকে এই কর আদায় করছে, যা দ্বৈত করের শামিল।
জানতে চাইলে পৌর হিসাব রক্ষক নুরে হেলাল মামুন বলেন
২০০০ সালের ২১ ডিসেম্বর তারিখে জারিকৃত জেলা সহকারী কর কমিশনারের কার্যালয়ের উপ কর কমিশনার শচিন্দ্র নাথ সরকার স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি করা হয়, যেখানে পৌর শহরের ব্যবসায়ীদের আয়কর সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়। সেই থেকেই পৌর কর্তৃপক্ষ ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময় বাধ্যতামূলকভাবে এই কর আদায় করছে।
তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, এটি একটি “আচরণ বৈষম্যমূলক আইন”, যা তাদের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একজন স্থানীয় মুদি দোকান মালিক বলেন, “আমরা ছোট ব্যবসায়ী, আমাদের সামান্য আয়। বড় ব্যবসায়ীরা যেমন কর দিতে পারে, আমরা তেমন পারি না। অথচ আমাদেরও সমানভাবে কর দিতে বাধ্য করা হচ্ছে!”
অন্যদিকে, বড় ব্যবসায়ীরাও জানান, তারা জেলা আয়কর অফিসে ফাইল খোলা রেখেছেন, অথচ পৌরসভার কাছেও কর দিতে হচ্ছে। এক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “একই ব্যবসার জন্য দুইবার কর দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়!”
এ বিষয়ে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে পৌর কর নির্ধারক আনিসল হক আমিস জানান, “আইন মেনেই কর আদায় করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে আমরা সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রায় কর ধার্য করার চেষ্টা করছি।” তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কর ব্যবস্থা ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য বৈষম্যমূলক। অর্থনীতিবিদদের মতে, কর কাঠামো এমন হওয়া উচিত যাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বাঁচতে পারে, বিকশিত হতে পারে।
একজন স্থানীয় অর্থনীতিবিদ বলেন, “একটি ক্ষুদ্র চা দোকানের ওপর ৫০০ টাকা কর চাপানো, অথচ বড় ব্যবসায়ীর জন্য করের বোঝা প্রায় একই হওয়া—এটি স্পষ্ট বৈষম্য। কর ব্যবস্থায় ব্যবসার আকার অনুযায়ী সহনীয় হার নিশ্চিত করা দরকার।”
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় মানবিক কারনে হলেও নীতিনির্ধারকদের নতুন করে ভাবতে হবে এবং এই দ্বৈত করের বোঝা থেকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।